০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৯:৫১:৩৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


`ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি' এটা একটা খারাপ পদক্ষেপ-মির্জা ফখরুল
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২১-০৯-২০২৪
`ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি' এটা একটা খারাপ পদক্ষেপ-মির্জা ফখরুল


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত কর্তৃপক্ষের ‘খারাপ পদক্ষেপ’ হিসেবে দেখছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শনিবার গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব এই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

 তিনি বলেন, ‘‘ রাজনীতি থাকতে হবে, রাজনীতিকে এক্সসেপ্ট করতে হবে। বিরাজনীতিকরণ কোনো এনসার না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করছে…. এটাকে আমি পুরোপুরি মনে করি, এটা একটা খারাপ পদক্ষেপ।”

 

‘‘ কারণ মাথা ব্যথার জন্য মাথা কেটে ফেলে দিতে হবে... এটা কোনো এনসার না। ট্রাই টু সোলভ ইট… কোথায় সমস্যা হচ্ছে সেটা সমাধান করার চেষ্টা করি। যে ছাত্র সংগঠনগুলো আছে তাদের সাথে আলোচনা করে… সমস্যা সমাধান ….।”

 

ফখরুল বলেন, ‘‘ আমি এটাতে একমত যে, রাজনৈতিক দলের লেজুড়ভিত্তি করা যাবে না… করা উচিতও না। এটাকে বাদ দিতে কি ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে, কি ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে… এ্সব বিষয়ে ছাত্রদের সাথে কথা বললেই সমাধান আসতে পারে।”

 ‘‘ এটা কি জোর করে, ইম্পোজ করে কি করা যাবে? তাহলে তো ওয়াট ইজ ডিফারেন্স বিটউইয়েন মার্শাল গভমেন্ট এন্ড দিস গভমেন্ট। আমাকে রাজনীতির মধ্যে থেকে রাজনীতি দিয়ে কাজটা করতে হবে।”

 

‘ছাত্র রাজনীতি বন্ধ হলে অন্ধকারের মানুষরা লাভবান হবে’

 

ছাত্র ইউনিয়ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার এককালের সভাপতি মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আমি তো মনে করি, ছাত্র রাজনীতি যদি সুস্থ না হয়, দেশের রাজনীতি সুস্থ হবে না। আর ছাত্র রাজনীতি থেকে যদি নেতৃত্ব তৈরি না হয় তাহলে জাতির নেতৃত্ব তৈরি হবে না।”

 

‘‘ এটা হচ্ছে যে, দেট ইজ এ ব্রিডিং গ্রাউন্ড… এখানে তৈরি হয়, এখানে রিক্রুটমেন্ট হয়। বুরোক্রেসিতে বলেন, রাজনীতিতে বলেন সব কিছু তো এখান(ছাত্রদের) থেকে আসবে। আমাদের ছেলে-পেলেরা যে রাজনীতি বিমুখ হয়ে গিয়েছিলো তার কারণ হচ্ছে যে, ছাত্র রাজনীতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে চলে গিয়েছিলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে। এখন আবার তারা আসতে শুরু করেছে… এখন যদি আমরা ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করে দেই তাহলে কারা ভালো হবে? যারা অন্ধকারের মধ্যে কাজ করে তাদের জন্য ভালো হবে, যারা আন্ডার গ্রাউন্ডে গিয়ে কাজ করে তারা লাভবান হবে।”

 

তিনি বলেন, ‘‘ রাজনীতি ওপেন রাখতে হবে। রাজনীতিকে এমনভাবে মোটিভেট করতে হবে যেন ভালো রাজনীতি হয়, সুস্থ রাজনীতি হয়।”
‘‘ আর ওইসব ক্রাইম বন্ধ করতে হবে যেমন হল দখল, সিট দখল, গণরুম এসব বন্ধ করতে হবে। এভাবে রাজনীতি বন্ধ করা উচিত হবে না।” 
সাংবাদিকদের সাথে আলোপকালে বিএনপি মহাসচিব সংবিধান সংশোধন, সংস্কার কার্য্ক্রম, দেশের রাজনীতিসহ নানা বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেন।

 ‘সংস্কার প্রসঙ্গে’

 

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ এই যে সংস্কারের বিষয়টা এটা কি মানুষকে বাদ দিয়ে হবে। সংস্কার করবেন মানুষের, দেশের, প্রতিষ্ঠানগুলো… তাই না। প্রতিষ্ঠানগুলোকে মানুষ কিভাবে দেখতে চায় সেগুলোর জন্য উচিত ছিলো… আমি যেটা মনে করি, আগে রাজনীতিবিদদের সঙ্গে কথা বলা… তাদের কাছে প্রস্তাব চাওয়া। সেই প্রস্তাবগুলো নিয়ে যারা এক্সপার্ট আছেন …যাদেরকে সিলেকশন করা হয়েছে ভালো সিলেকশন হয়েছে… তাদের সাথে কথা বলা ।”

 

‘‘ এখন কি হয়েছে? আগে উনারা সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে পলিটিক্যাল পার্টিগুলোর সঙ্গে কথা বলবেন, সংস্কার প্রস্তাব তৈরি করবেন… দেট ইজ লং টাইম। তারপরে আপনি প্রথমেই কিন্তু জনগনকে থেকে বিচ্ছিন্ন হচ্ছে… পিপলস পার্টিসিপেশন যেটা সেটা যদি না থাকে কোনো সংস্কারই সাসটেনেবল হবে না। কমিটমেন্ট থাকতে, রাজনৈতিক অঙ্গীকার থাকতে হবে, সিদ্ধান্ত নিতে হবে… আপনি জাতীয়করণ করবেন কি করবেন না সেটা তো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত….. আপনি কোনটাকে অগ্রাধিকার দেবেন হাসপাতালকে দেবে না মেগা প্রজেক্টকে দেবেন… এটা তো পলিটিক্যাল কমিটমেন্ট তাই না।”

 

‘লেজে-গোবরে শিক্ষা ব্যবস্থা’

 মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ এই যে আমাদের লেজে-গোবরে শিক্ষা ব্যবস্থা … একদিকে ইংরেজি শিক্ষা ব্যবস্থা, মিডিয়াম শিক্ষা ব্যবস্থা, কতগুলো দেশের শিক্ষার সাথে মিল নেই, অন্যদিকে ধর্মীয় শিক্ষা ব্যবস্থা… এসবকে তো একটা জায়গায় নিয়ে আসতে হবে তো। সেটা জন্য আপনাকে কথা বলতে হবে, এনগেইজ করতে হবে, কথা বলে আনতে হবে।”

 

‘‘ এখন যেভাবে উনারা করছেন এটা যদি সাকসেসফুল না হয় তাহলে তাদের যে বিভিন্ন রকম ধারণা আছে সেটাকে ইম্পুজ করার চেষ্টা করবেন। ইম্পুজ করে তো এখানে কোনো পাওয়া যাবে না। ইউ মাস্ট হেভ কল টু দি পলিটিক্যাল পার্টি…. আপনি স্টেকহোল্ডারদের সাথে কথা বলেন, আপনি অন্যান্য এনজিওদের সাথে কথা বলেন, শিক্ষকদের সাথে কথা বলেন, সমাজের সমস্ত পেশার সাথে কথা বলেন, তারপরে রাজনীতিবিদদের সাথে কথা বলেন… এটা খুব কঠিন কাজ না। এককভাবে আপনি যদি চিন্তা করেন, আমি এক্সপার্টদের দিয়ে করে ওইগুলো আমি চাপিয়ে দে্বো তা তো মেনে নেবে না।’’

 ‘রাজনৈতিক সরকারের কোনো বিকল্প নাই’

 

নির্বাচনে যৌক্তিক সময়ের ব্যাখ্যা দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আমি ঠিক ওইভাবে সুনির্দিষ্ট কোনো সময় বলিনি, বলব না, বলা উচিতও না। এটা্ তো একটা কাজের ব্যাপার। তবে যত দেরি হবে তত দেশের ক্ষতি হবে, সমাজের ক্ষতি হবে, রাজনীতির ক্ষতি হবে।”

‘‘ কারণ পলিটিক্যাল গভার্নেন্সের কোনো বিকল্প নাই। আমরা বরাবর এটা বিশ্বাস করি, আমরা মনে করি, এটা প্রমাণিত যে, ডেমোক্রেসি ইজ বেস্ট সিষ্টেম অব গভার্নেন্স। কেনো জানিনা, আমরা হয়ে যাচ্ছি, এজন্য আমাদের বুদ্ধিজীবীরা কিছুটা দায়ী… তারা মনে করেন যে, তারাই একমাত্র শুধু ভালো চিন্তা করেন। আমি ভিন্নভাবে চিন্তা করি… ওয়েন দেয়ার ইজ ক্রাসিস গো টু পিপলস, লার্ণ ফর্ম দেম। আমার ওপর চাপিয়ে দিয়ে কারো মতবাদ কিংবা চিন্তা-ভাবনা যদি দিয়ে দেয় সেটা তো হয় না। পলিটিক্স বাদ দিয়ে এখানে তো রাষ্ট্র চালানো যাবে না। রাষ্ট্র ইট সেলফ ইজ দ্যা পলিটিক্যাল এনটিটি।”


তিনি বলেন, ‘‘ আপনি হত্যাকারীদের সঙ্গে যারা সহযোগিতা করেছে তাদেরকে সরকারে রেখে দেবেন… আপনি ভালো জিনিস করবেন কোত্থেকে? কিভাবে? দেয়ার ইজ গভার্মেন্ট বহু জায়গায় মূল জায়গায়গুলো নিয়ে বসে আছে। এগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।”

 ‘আপনাদের ওপর কি এখনো চাপ আছে’

 

গণমাধ্যমের ওপর চাপ আছে কিনা সাংবাদিকদের কাছে পাল্টা প্রশ্ন করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ আপনাদের ওপর কি আগের মতো চাপ আছে এটা জানতে ইচ্ছা করে। মালিকদের ওপর থেকে আছে কি?”

সাংবাদিকরা জবাব দেন ‘এখন চাপ নেই’।

 জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ এটা ঠিক না। চাপ তখনও ছিলো, এখনো আছে। আপনারা বলতে চান না।”

‘সংবিধান সংশোধন প্রসঙ্গে’

 
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ সংবিধান পরিবর্তনের ব্যাপারে আমার খুব পরিস্কার বক্তব্য, পার্টির বক্তব্য বলছি না, আমি বক্তব্য হচ্ছে, সংবিধানে পরিবর্তন করতে হলে আগে মানুষের কাছে জানতে হবে তারা কিরকম পরিবর্তন চায়। আরেকটা বিষয় আছে, আমি-আপনি-কয়েকজন এক্সপার্টস আমরা নিজেরা ঠিক করে দিলাম সেটা একথা।”

 

‘‘ সংবিধানের আমূল পরিবর্তন, নতুন সংবিধান করতে হলে তাহলে আগে গণপরিষদ করতে হবে। গণপরিষদ তৈরি না হলে পরিবর্তন করবেন কিভাবে? তারপরে পাবলিক কনসেন্সাস তো আছেই… আপনি আইনগত দিকগুলো দেখে নেন… সেটা তো একদিনে পাল্টিয়ে দিতে পারবেন না। যেটা নিরাপদ হবে জনগনের সাথে কথা বলে, জনগনের ম্যান্ডেট নিয়ে আমূলক পরির্তন করতে চান বা নতুন সংবিধান লিখতে চান সেটা। আমি যে কথাটা আমি বলেছিলাম যে, নির্বাচনটা হোক এই নির্বাচনের জন্য যেটুকু সংস্কার করা দরকার যেমন নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন ইত্যাদি দ্রুত সংস্কার করে নির্বাচনটা করে সেখানে আপনি সব কিছু করতে পারেন। পার্লামেন্টে আপনি সমস্ত প্রয়োজনীয় সংস্কার আনতে পারেন।”

 

পুরো সংবিধান সংশোধন বিষয়টি এখন আলোচনা হচ্ছে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘এটা খুব ডিফিকাল্ট। অসম্ভব তো কিছু নাই। একটা বিপ্লবী সরকার হলে… এই সরকারের উচিত ছিলো বিপ্লবী সরকার করা।”

‘‘ এই সংবিধানের অধীনে শপথ না নেওয়া। এই সংবিধানের অধীনেই তো এই সরকার শপথ নিয়েছে তাই না। তাহলে ওই জিনিসটা সামনে রাখতে হবে…এটা অস্বীকার করা সম্ভব না।”

ফখরুল বলেন, ‘‘ আমি নিজেরাই উদ্যোগ নিচ্ছি সংবিধানে কি কি সংস্কার করতে হবে। আমার পার্টি থেকে কাজ শুরু করেছি। আমার মনে হয়, অন্যান্য পার্টিও কাজ করছে।”

‘‘ যাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তারা নিসন্দেহে উচুমাপের বিশেষজ্ঞ। আমি মনে করি যে, তারা ভালো করবেন। সাথে মানুষের চাওয়াটাকে নিতে হবে।”

‘শেখ হাসিনার মামলা ফেইস করা উচিত’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আমি বলেছি যে, তাকে(শেখ হাসিনা) এই সমস্ত হত্যার অভিযোগ এসেছে, মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এসেছে এগুলো তাকে আমাদের দেশের যে আদালত আছে তাতে ফেইস করতে হবে। নো বডি ইজ এভাব ল… তাকে আইনের সামনে আসতে হবে।”

 

‘‘ উনি যদি সত্যিকার অর্থে রাজনীতিবিদ হন উনি নিজে এসে এখানে ফেইস করা্। যেটা আমাদের নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া করেছেন। তিনি লন্ডনে ছিলেন তিনি এসে সারেন্ডার করেছে, তিনি ট্রায়াল ফেইস করেছেন, তারপরে জেলে গেছেন.. এটাই হচ্ছে একজন পলিটিক্যাল লীডারের দ্যাট শুড বি দ্যা এটিুচট।”

শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত আনতে সরকারের ভূমিকা নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষন করলে তিনি বলেন, ‘‘ ‘‘ নিশ্চয় তারা(অন্তবর্তীকালীন সরকার) চিন্তা করছেন। আমি এব্যাপারে তাদের ওপর প্রোভোক করতে চাই না। তবে উচিত হবে তাদের অতি দ্রুত তাকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা।”

‘লম্বা সময় যদি এই সরকার থাকে কি হবে’

 সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ পারে না। এটা কেউ চাইলে ভুল সিদ্ধান্ত নেবে এবং এটা কখনই কাজে দেবে না। অতীতেও জানি… দ্যাট উইল ডেনজারাস ফর নেশন এটা টা আরেক বড় রকমের সমস্যা তৈরি হবে। কি সমস্যা হবে এটা তো এখন বলা যাবে না। তবে বাংলাদেশের মানুষ এটা মানবে না।”

শেয়ার করুন